আজিম নিহাদ :
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে কিটকট (চেয়ার) গুলোর অর্ধেক বিনামূল্যে ব্যবহার করতে দেয়ার জন্য ২০১৬ সালে নির্দেশনা দেয় হাইকোর্ট। বিনামূল্যের চেয়ার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে হ-য-ব-র-ল অবস্থা চলে আসলেও সম্প্রতি সমুদ্র সৈকত থেকে এসব চেয়ার একেবারে ‘উধাও’ হয়ে গেছে। এমনকি সাইনবোর্ডও সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এখন দূরবীন দিয়ে খুঁজলেও মিলবে না পর্যটকদের জন্য রাখা বিনামূল্যের চেয়ার।
হাইকোর্টের আদেশের পর ‘নীল রঙ’ দিয়ে বিনামূল্যের চেয়ার গুলো চিহ্নিত করা হয়। নীল রঙ দেওয়া চেয়ারে সৈকতে আগত দর্শণার্থীরা বিনামূল্যে বসতে পারবেন। কিন্তু বিনামূল্যের চেয়ারে বসতে গিয়ে নানা হয়রানির শিকার হয় পর্যটক ও স্থানীয়রা। এমনকি আগের মতই টাকা আদায় করে অসাধু কিটকট ব্যবসায়ীরা। এনিয়ে বিভিন্ন সময়ে পর্যটকদের সাথে ঝগড়া, জেলা প্রশাসনের অভিযানসহ নানা ঘটনা ঘটে। এরপরও মাঝে মধ্যে দেখা মিলত নীল চেয়ার। কিন্তু গত দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে সমুদ্র সৈকতের কোথাও নীল চেয়ারের দেখা মিলছে না।
সম্প্রতি বেশ কয়েকবার সমুদ্র সৈকতে গিয়ে নীল চেয়ারের দেখা মিলেনি। বিনামূল্যের চেয়ার গুলো থেকে নীল রঙ তুলে অন্য চেয়ার গুলোর সাথে বসিয়ে আগের মতই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে কিটকট ব্যবসায়ীরা। লাবণী পয়েন্টে হাইকোর্টের নিদের্শনার সাইনবোর্ডটিও দেখা যায়নি।
সৈকতে কয়েকজন পর্যটক ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিনামূল্যের চেয়ার কোথায় রাখা হয়েছে, তা জানতে চাওয়া হলে নানা হয়রানি ও লাঞ্চিত করছে চেয়ার ভাড়া দেয়ার দায়িত্বে থাকা কর্মচারীরা। তাই বাধ্য হয়ে ভাড়া দিয়েই চেয়ারে বসছেন তারা। জেলা প্রশাসন ও ট্যুরিস্ট পুলিশের অবহেলার কারণে কিটকট ব্যবসায়ীরা এই নৈরাজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।
কীটকট চেয়ার গুলোতে ঘণ্টায় ৩০ টাকা করে আদায় করা হয়। এখন বিনামূল্যের চেয়ার গুলোও ঘণ্টায় ৩০ টাকা করে ভাড়া দিচ্ছে ব্যবসায়ীরা।
জেলা প্রশাসন ও বীচ ম্যানেজম্যান্ট কমিটির নিয়োগকৃত বীচকর্মীদের ইনচার্জ মাহবুব আলম বলেন, প্রায় দুই মাস ধরে বিনামূল্যের চেয়ার দেখা যাচ্ছে না। অনেক পর্যটক ও স্থানীয়রা বিনামূল্যের চেয়ার না পেয়ে তাদের (বীচকর্মী) কাছে অভিযোগ করেন। তিনি (মাহবুব) বিষয়টি বেশ কয়েকবার জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলে জানানো হয়েছে বলে জানান।
সমুদ্র সৈকত কীটকট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর সোহেল বলেন, ‘বিনামূল্যে হওয়ার কারণে চেয়ারগুলো ইচ্ছেমত ব্যবহার করে পর্যটক ও স্থানীয়রা। একারণে নষ্ট হয়ে গেছে। এখন সেগুলো মেরামত করা হচ্ছে। তাই মাস দুয়েক একটু সমস্যা হচ্ছে। শিগগিরই নীল চেয়ার আবারও দেখতে পাবেন।’
কক্সবাজার পিপল্স ফোরামের মুখপাত্র এইচ এম নজরুল ইসলাম বলেন, কীটকট ব্যবসায়ীরা হাইকোর্টের আদেশ তোয়াক্কা করছে না। আদেশের শুরু থেকেই নীল চেয়ার নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে নৈরাজ্যের অভিযোগ রয়েছে। সর্বশেষ এখন কোথাও নীল চেয়ার দেখা যায় না। ব্যবসায়ীরা বিনামূল্যের নীল চেয়ার নিয়ে রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, কোরবানের ঈদে কক্সবাজার প্রচুর পর্যটক আসবে। তাই ঈদের আগেই কিটকট ব্যবসায়ীদের নৈরাজ্য বন্ধ করতে প্রশাসনের উদ্যোগ নেওয়া দরকার।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে প্রায় ১ হাজার ২০০ চেয়ার অনুমোদন রয়েছে। এরমধ্যে প্রায় ৯০০ চেয়ার বসানো হয়। মূল চেয়ারের অর্ধেক উন্মুক্ত অর্থাৎ বিনামূল্যে রাখার জন্য ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর হাইকোর্টের বিচারপতি কামরুল ইসলাম সিদ্দিকী ও বিচারপতি শেখ হাসান আরিফের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারিসহ অন্তবর্তীকালীন আদেশ জারি করে। সেই আদেশ বাস্তবায়নের জন্য কক্সবাজার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে নির্দেশনা দেয়া হয়।
জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সেলিম শেখ বলেন, ‘নীল চেয়ার উধাও হওয়ার বিষয়টি জানার পর কিটকট ব্যবসায়ীদের সাথে বৈঠক করেছি। তারা নষ্ট হয়ে যাওয়ার অজুহাত দেখিয়েছেন। এরপরও নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। আগামী ২১ আগষ্টের মধ্যে নীল চেয়ার না নামালে ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-